নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র যাচইয়ের কাজ নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার পর সরকারি গাড়ি চালকদের যাবতীয় মূল কাগজপত্র সঙ্গে রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের পরিবহন কমিশনার মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চালকদের লিখিত ও মৌখিকভাবে বলে দেওয়া হয়েছে গাড়ির মূল কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে।”
বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর গত ২৯ জুলাই থেকে রাজধানীতে বিক্ষোভ চালিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা গত দুদিন ধরে রাস্তায় রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চালক ও যানবাহনের লাইসেন্স দেখতে চাইছে। কাগজ দেখাতে না পারলে আটকে দেওয়া হচ্ছে গাড়ি।
পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের বেশ কয়েকটি গাড়ির চালক বৃহস্পতিবার লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি গাড়ি এবং একজন বিচারপতির গাড়িও ওই পরীক্ষায় উৎপাতে পারেনি।
শিক্ষার্থীরা এসব চালককে পুলিশে সোপর্দ করার পর লাইসেন্স না থাকার মামলা দেওয়া হয় তাদের বিরুদ্ধে। এমনকি এক পুলিশকে আরেক পুলিশের মাধ্যমে মামলা দেওয়ার ঘটনাও রাজধানীতে ঘটেছে।
সংশ্লিষ্ট সরকারি গাড়ির চালকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বলেছেন, তাদের লাইসেন্স থাকলেও সরকারি গাড়ি চালান বলে তা সঙ্গে নিয়ে বের হন না। গাড়ির কাগজপত্র অফিসেই থাকে।
মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন তো পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। ওদেরকে (গাড়ি চালকদের) বলে দিয়েছি এখন থেকে মূল কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে, মূল কাগজই তারা সঙ্গে রাখবে।”
গাড়ি চালানোর সময় লাইসেন্স সঙ্গে রাখার নিয়ম লাইসেন্সের পেছনেই স্পষ্ট করে লেখা থাকে। পাশাপাশি বীমার কাগজ ও ব্লুবুকও সঙ্গে রাখার কথা চালকদের। ট্রাফিক সার্জেন্ট চাইলে তা দেখাতে হবে।
তাহলে সরকারি লোক কেন নিয়ম মানে না- এই প্রশ্নের ব্যাখ্যায় পরিবহন কমিশনার মুনশী শাহাবুদ্দীন বলেন, “মূল কাগজ কেউ সঙ্গে না রাখলে তা পরিবহন পুল ভবনে রাখা হয়। ওইসব কাগজের ফটোকপি সঙ্গে রাখার একটা রেওয়াজ হয়ে গিয়েছে। তবে কখনো কখনো কেউ মূল কাগজও সঙ্গে রাখেন।”
সরকারি ড্রাইভারদের গাড়ির মূল কাগজের বদলে ফটোকপি দেওয়া হলেও তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স অবশ্যই সঙ্গে রাখার নির্দেশনা দেওয়া আছে বলে দাবি করেন পরিবহন কমিশনার।
তিনি বলেন, “মূল কাগজপত্র একটু সেনসেটিভ হওয়ায় তা অনেক সময় অফিসে সংরক্ষণ করা হয়। তবে ওইসব কাগজের ফটোকপি তারা সঙ্গে রাখে।”
সরকারি চাকরিতে গাড়ি চালকদের পরিচয়পত্রের বাইরে পরিবহন পুলের গাড়ি চালক হিসেবে আরকেটি পরিচয়পত্র দেওয়া হয় বলে জানান শাহাবুদ্দিন।
“যাতে বোঝা যায় তারা সরকারি ড্রাইভার। তাদের নির্দিষ্ট পোশাকও আছে, তবে সবাই হয়ত সব সময় সেই ড্রেস পড়েন না।”
সব সরকারি গাড়ির কাগজপত্র হালনাগাদ আছে দাবি করে পরিবহন কমিশনার বলেন, “আমাদের তো আর্থিক সমস্যা নেই, এই খাতে নিয়মিত বরাদ্দও থাকে।”
তিনি বলেন, সরকারি পরিবহন পুলের গাড়ি যারা চালান, তাদের সবারই ভারী গাড়ি চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকে। এই লাইসেন্স পেতে হলে অভিজ্ঞতাও বেশি লাগে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপসচিব থেকে শুরু করে জ্যেষ্ঠ সচিব এবং মন্ত্রীদের গাড়ি পরিবহন পুল থেকে সরবরাহ করা হয়।
শাহাবুদ্দিন জানান, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ব্যবহৃত সরকারি গাড়ির কাগজপত্র জেলা-উপজেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে ঢাকায় যেসব গাড়ি চলে রাতে সেগুলো পরিবহন পুলে রাখা হয়। পরিবহন পুলের অধীনে ঢাকায় তিন শতাধিক গাড়ি প্রতিদিন ব্যবহার করা হয়।
তিনি বলেন, “আমরা তাদের (ড্রাইভার) সব সময়ই বলি- তোমরা হবে মডেল, তোমরা সিট বেল্ট ব্যবহার করবে, আইন ভঙ্গ করবে না।”
সূত্র, বিডিনিউজ২৪.কম